ডিজিটাল প্রযুক্তি কাজে লাগিয়ে ২০২১ সালের মধ্যে ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত “ডিজিটাল বাংলাদেশ” প্রতিষ্ঠা করা ছিল আমাদের অঙ্গীকার। আমরা সে লক্ষ্যে এগিয়ে যাচ্ছি। এখন দেশের ইউনিয়ন, পৌরসভা, উপজেলা ও জেলায় ৫ হাজার ২৭৫টি ডিজিটাল সেন্টারের মাধ্যমে জনগণকে ২০০ রকমের সেবা দেওয়া হচ্ছে।’ গতকাল সোমবার বিকেলে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে দেশের তথ্যপ্রযুক্তিভিত্তিক সবচেয়ে বড় আয়োজন ডিজিটাল ওয়ার্ল্ড ২০১৫-এর উদ্বোধনকালে এসব কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘১৯৯৬ সালে আমরা ক্ষমতায় এসে মোবাইল ফোন সংযোগের মনোপলি ভেঙে দিয়েছিলাম। যার ফলে আজ ১৬ কোটি মানুষের দেশে ১২ কোটির বেশি সিমকার্ড ব্যবহৃত হচ্ছে। ই-গভর্ন্যান্সের বাস্তবায়ন অনেকটাই হয়ে গেছে। দুই বছরের মধ্যে বাংলাদেশ কৃত্রিম উপগ্রহ উৎক্ষেপণ করবে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সেই মেয়াদে কম্পিউটার ও এর যন্ত্রাংশের ওপর আমদানি শুল্ক ও কর তুলে দিয়েছিলাম সজীব ওয়াজেদ জয়ের পরামর্শে।’ প্রধানমন্ত্রী হেসে বলেন, ‘জয়ের কাছেই আমার কম্পিউটার মানে ডিজিটাল প্রযুক্তির হাতেখড়ি।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে বাংলাদেশকে যেমন প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলা করতে হয়, তেমনি মনুষ্যসৃষ্ট দুর্যোগও মোকাবিলা করতে হয়। এক মাস ধরে তেমন দুর্যোগের মোকাবিলা করতে হচ্ছে। যারা উন্নয়ন দেখে না, অন্ধ হয়ে থাকে, তাদের নজরে রাখতে হবে। তিনি আরও বলেন, ‘প্রতিদিন যারা মানুষ পুড়িয়ে মারতে পারে তারা মানুষ, বিশ্বাস করতেও কষ্ট হয়। বারবার তারা উন্নয়নে বাধা দেবে। এই বাধা উত্তরণ করতে হবে। সবাইকে সঙ্গে নিয়ে আমরা এগিয়ে যেতে চাই।’
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর ছেলে এবং তাঁর তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি-বিষয়ক (আইসিটি) উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয় বলেন, ‘পাঁচ বছর আগে দেশে তথ্যপ্রযুক্তি (আইটি) শিল্প বলে কিছু ছিল না। তখন আইটি খাত থেকে রপ্তানি আয় ছিল ২৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার, যা ২৫০ মিলিয়নে দাঁড়িয়েছে। এই পাঁচ বছরে যা যা হয়েছে, তা কেউ কল্পনাই করতে পারেনি। আমার আশা, শিগগিরই তৈরি পোশাক (গার্মেন্টস) শিল্পের চেয়ে আইটি (তথ্যপ্রযুক্তি) খাতের রপ্তানি আয় বাড়বে।’
নেপাল-ভুটানসহ সার্কভুক্ত দেশগুলোকে পরস্পরের মধ্যে সংযুক্তির (কানেকটিভিটি) আওতায় আনার উদ্যোগ নেওয়া হবে বলে তিনি জানান।
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহ্মেদ, আইসিটি বিভাগের সচিব শ্যাম সুন্দর সিকদার। স্বাগত বক্তব্য দেন বেসিসের সভাপতি শামীম আহসান।
অনুষ্ঠানের শুরুতে ভাষাশহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। এ ছাড়া ডিজিটাল ওয়ার্ল্ডের থিম সংয়ের ভিডিও দেখানো হয় অনুষ্ঠানে। অনুষ্ঠানস্থল হল অব ফেমের ছাদে ডিজিটাল বাংলাদেশ নিয়ে একটি লেজার রশ্মির প্রদর্শনীও দেখানো হয়। বিশেষ হলোগ্রাফিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে এ আয়োজনের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী।
সরকারের আইসিটি বিভাগ ও সফটওয়্যার ব্যবসা খাতের সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেস-বেসিস আয়োজিত ডিজিটাল ওয়ার্ল্ড চলবে ১২ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে রাত আটটা পর্যন্ত এটি সবার জন্য খোলা থাকবে। এ আয়োজনে সহযোগী এটুআই প্রকল্প ও বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিল।
‘ভবিষ্যৎ এখানেই’ (ফিউচার ইজ হেয়ার) স্লোগান নিয়ে আয়োজিত ডিজিটাল ওয়ার্ল্ডে সরকারি, বেসরকারি বিভিন্ন সেবা, সফটওয়্যার ও তথ্যপ্রযুক্তি সেবা খাতের প্রদর্শনী, সেমিনার, তরুণদের নানা উদ্যোগ দেখা ও নতুন নতুন প্রযুক্তি ব্যবহারের অভিজ্ঞতা নেওয়ার সুযোগ থাকছে।
পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নে: মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, এটুআই, বিসিসি, ডিওআইসিটি ও বেসিস